আরও দেখুন
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) কর্মকর্তারা আরও সুদের হার কমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কারণ তারা প্রত্যাশা করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিমালা ইউরোপের অর্থনীতির ওপর গুরুতর এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে—এমনকি যদি ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করে তারপরও।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর সাথে ধারাবাহিক বৈঠকের পরে, বেশিরভাগ ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকরা হতাশা নিয়ে ওয়াশিংটন ছেড়েছেন। অনেকেই ধারণা করছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত আচরণ অব্যাহত থাকবে, যা কিছু সময়ের জন্য ব্যয় এবং বিনিয়োগকে আটকে দেবে। স্পষ্টতই, ট্রাম্পের এই অনিশ্চয়তার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে, দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থায় আস্থার ক্ষয় ঘটছে। এই ধরনের অস্থিরতা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পূর্বাভাস জটিল করে তুলছে এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন করে দিচ্ছে।
ইউরোর মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিজনিত কারনে অর্থায়নের কঠোর শর্তারোপ, এবং জ্বালানির মূল্য হ্রাস—সবকিছু মিলিয়ে জুন মাসের বৈঠকে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে। এরপর কী হবে, তা মূলত আগামী বছরের মুদ্রাস্ফীতি পূর্বাভাসের উপর নির্ভর করবে।
এই ধরনের প্রত্যাশা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে EUR/USD পেয়ারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং ডলারের বিপরীতে ইউরোর বৃদ্ধিকে সীমিত করছে।
ব্যাংক অফ আমেরিকা, এবং মরগ্যান স্ট্যানলি-এর অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, চাহিদা বৃদ্ধির জন্য ইউরোজোনের ডিপোজিট রেট বর্তমানে 2.25% থেকে কমে এই বছর কমপক্ষে 1.5% হতে পারে।
ইসিবির গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যরা—যেমন ওলি রেন এবং গেদিমিনাস সিমকাস—সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা ঋণের খরচ এমন মাত্রায় কমানোর জন্য খোলা মন নিয়ে বিবেচনা করছেন। তবে, ক্লাস নট এবং মার্টিনস কাজাকস এর মতো অন্যরা অতিরিক্ত পদক্ষেপের বিপক্ষে সতর্ক করেছেন, কারণ তারা মনে করেন মাঝামাঝি মেয়াদে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরিণতি এখনও পরিষ্কার নয়।
ইসিবি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে সাধারণভাবে সরকারি অবস্থানে অটল রয়েছেন। তিনি বলেন, "যখন ঝুঁকির আকার এবং বন্টন অত্যন্ত অনিশ্চিত, তখন হার নির্দিষ্ট পথে নিয়ে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।"
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো দুর্বল প্রবৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। PMI জরিপে দেখা গিয়েছে যে আস্থা দুর্বল এবং চাহিদা কম। IMF মঙ্গলবার প্রকাশিত পূর্বাভাসে ইউরোজোনের ২০টি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১% থেকে ০.৮%-এ নামিয়ে এনেছে। ধীর প্রবৃদ্ধির সাথে নিম্ন মুদ্রাস্ফীতিও আসছে। IMF এবং ইসিবি উভয়ই আশা করছে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চাপ এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ২%-এ পৌঁছাবে।
তবুও, বড় ধরনের পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে ইসিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ফিলিপ লেন বলেন, সুদের হারে সর্বোচ্চ ২৫ বেসিস পয়েন্টের পরিবর্তন আসবে, এমনটা ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই, যদিও তিনি এটিকে একটি তাত্ত্বিক বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
EUR/USD-এর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
বর্তমানে, ক্রেতাদের অবশ্যই মূল্যকে 1.1390 লেভেলে পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল এই লেভেল ব্রেক করা হলে 1.1435 টেস্ট করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেখান থেকে 1.1490 লেভেলের দিকে মুভমেন্টের সম্ভাবনাও রয়েছে, তবে মার্কেটের বড় প্লেয়ারদের সমর্থন ছাড়া এটি অর্জন করা কঠিন। এই পেয়ারের মূল্যের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1570 এর লেভেল।
যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, আমি 1.1315 লেভেলের কাছাকাছি বড় ক্রেতাদের সক্রিয়তার প্রত্যাশা করছি। যদি সেখানে সমর্থন না পাওয়া যায়, তাহলে 1.1260 লো রিটেস্ট করার জন্য অপেক্ষা করা বা 1.1215 থেকে লং পজিশন বিবেচনা করা যেতে পারে।
GBP/USD-এর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
পাউন্ড ক্রেতাদের অবশ্যই নিকটবর্তী রেসিস্ট্যান্স 1.3340 ব্রেক করতে হবে। কেবল তখনই 1.3380 -এ পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে, যদিও মূল্যের এই লেভেলের ওপরে উঠা কঠিন হতে পারে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.3416 এর জোন।
যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে বিক্রেতারা 1.3285 লেভেল পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করবে। এই রেঞ্জ ব্রেক করা হলে বুলিশ পজিশনের উপর বড় আঘাত আসবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য ন্যূনতম 1.3245 পর্যন্ত নামতে পারে, এরপর 1.3205 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।